ABNEWS - online news portal

Header
collapse
...
Home / Opinions / সমালোচনা কোনো বিদ্বেষ নয়

সমালোচনা কোনো বিদ্বেষ নয়

2025-10-31  AB NEWS UK  427 views
সমালোচনা কোনো বিদ্বেষ নয়

শাহ লাভলী রহমান:

আমাদের রাজনীতি ও সংগঠন জগতে একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে শীর্ষ নেতারা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন তাঁদের সহযোগীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে। একজন নেতা যতই সৎ, ত্যাগী বা দূরদর্শী হোন না কেন, তাঁর আশেপাশের কিছু অসাধু ব্যক্তি ব্যক্তিস্বার্থে এমনসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় যা পুরো সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেয়। এতে জনগণের আস্থা কমে, দল দুর্বল হয়, এবং দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আমাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাঠামো গুলোতে এখনও ব্যক্তিনির্ভরতা প্রাধান্য পাচ্ছে। অনেক দলেই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর চেয়ে ব্যক্তিগত আনুগত্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে দলের ভেতরে একধরনের ‘অন্ধ আনুগত্যের বলয়’ তৈরি হয়, যেখানে সৎ সমালোচনা বা ভিন্নমতকে প্রায়ই শত্রুতা হিসেবে দেখা হয়। এতে দলীয় অভ্যন্তরে নৈতিকতা ও জবাবদিহির চর্চা হারিয়ে যাচ্ছে। সৎ ও যোগ্য কর্মীরা পিছিয়ে পড়ছেন, আর তোষামোদে দক্ষ লোকেরা প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন।

আরও বড় সমস্যা হলো, পদায়ন বা দায়িত্ব বণ্টনে যোগ্যতার চেয়ে সম্পর্ক বা স্বজনপ্রীতি প্রাধান্য পাচ্ছে। এমন অবস্থায় শীর্ষ নেতৃত্ব বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগ হারায়। তাঁদের নাম ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি প্রভাব খাটায়, দুর্নীতি করে, এমনকি জনগণকে হয়রানি করে। অথচ সেই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায় শেষ পর্যন্ত এসে পড়ে দলের প্রধানের ওপরই।

তবে সমাধান অসম্ভব নয়। প্রথমত, প্রতিটি রাজনৈতিক দলে অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি কাঠামো জোরদার করতে হবে—যেখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত যে-ই হোক, তাকে আইনি ও সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, দলের ভেতরে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সমালোচনা কোনো বিদ্বেষ নয়, বরং আত্মসমালোচনার পথ।

তৃতীয়ত, তরুণ সমাজকে সংগঠনের ও রাজনীতিকদের জন্য নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ চালু করতে হবে, যাতে তারা বুঝতে শেখে যে রাজনীতি ও সংগঠনের কাজ ব্যক্তিগত উন্নতির পথ নয়, এটি সমাজসেবার মাধ্যম।

গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজেরও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তারা যদি দায়িত্বশীল সমালোচনার মাধ্যমে নেতাদের চোখে বাস্তবতা তুলে ধরতে পারে, তাহলে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।

অবশেষে বলা যায়, একটি দলের প্রকৃত শক্তি তার নেতা নয়, বরং তার নীতি ও নৈতিক অবস্থান। সহযোগীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যদি নেতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তবে এটি কেবল ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়—বরং একটি সাংগঠনিক ও নৈতিক সংকটের প্রতিফলন। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে রাজনীতিতে প্রয়োজন সৎ আত্মসমালোচনা, নৈতিক দৃঢ়তা ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব। কারণ, নৈতিক রাজনীতি এ সংগঠন ছাড়া টেকসই গণতন্ত্র কখনোই গড়ে ওঠে না।


Share: